শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ন
মাওলানা মাহাদি হাসান:
মানুষের ষড়রিপুর অন্যতম একটি হলো রাগ। রাগ এমন একটি অস্বস্তিকর তীব্র মানসিক অবস্থা, যা মানুষের শুভ বুদ্ধিকে কমিয়ে দেয়। রাগের কারণে একজন ব্যক্তি মানসিক অস্বস্তির পাশাপাশি শারীরিক অস্বস্তিতেও ভোগেন।
কেউ কেউ রাগকে একটি আবেগ হিসেবে দেখে থাকেন, যা অস্বস্তিকর উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে ব্যক্তির মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি ধর্মীয়ভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কেননা অনেক সময় রাগের কারণে স্বাভাবিক বুদ্ধি লোপ হওয়ায় অনেকে গর্হিত ও অহিতকর কাজ করে ফেলে, যা শরিয়তে ব্যাপকভাবে নিষেধ। এজন্য শরিয়তে রাগকে সমূলে দমন করার নির্দেশনা রয়েছে। যাতে মানুষ গর্হিত ও অন্যায় কাজ থেকে বেঁচে থাকতে পারে।
পবিত্র কোরআনে রাগ দমনকে মহান আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম বলা হয়েছে। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘যারা রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল (তারা সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত)। আর আল্লাহতায়ালা সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৩৪)
আয়াতে রাগ সংবরণ এবং মানুষকে ক্ষমা করার বিষয়টি পাশাপাশি বলা হয়েছে। এখানে লক্ষণীয় দিক হলো, মানুষ সাধারণত অন্য মানুষের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে কিংবা অন্য মানুষ দ্বারা তার ছোট ছোট অধিকার হরণের শিকার হয়ে রাগ করে থাকে। প্রথমে বিষয়টি ছোট আকারে শুরু হলেও রাগ দমন করতে না পারলে তা বৃহৎ আকার ধারণ করে। কিন্তু শুরুতেই যদি ছোট ছোট ভুল করা লোকদের ক্ষমা করে দেওয়া যায় কিংবা বিষয়টির মীমাংসা করে ফেলা হয়, তাহলে তা বৃহৎ আকার ধারণ করে অরাজকতা সৃষ্টি হবে না। এজন্যই আয়াতে রাগ সংবরণের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাই কোনো মানুষের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে রাগ করলে মহান আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের জন্য রাগ দমন করে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। এতেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
রাগ সংবরণ করা এবং মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়া মুমিন মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘তারা যখন রাগান্বিত হয় তখন ক্ষমা করে দেয়।’ (সুরা শুরা, আয়াত ৩৭)
মুমিন ব্যক্তিরা রাগের সময় নিজেদের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে না। বরং রাগের সময়ও তাদের মাঝে ক্ষমা ও অনুকম্পার প্রাবল্যতা থাকে। তারা রাগ সংবরণ করে মানুষকে ক্ষমা করে দেয়। তারা জানেন মহান আল্লাহ এর প্রতিদান হিসেবে জান্নাত দেবেন।
হাদিসে এসেছে, ‘এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এমন একটি আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। রাসুল (সা.) বললেন, তুমি রাগ প্রকাশ করবে না, এতে তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে।’ (তাবরানি)
মানুষের প্রতি মানুষের রাগ-ক্রোধ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নানা কলহ সৃষ্টি করে। তাই আসুন রাগ দমন করে ক্ষমাশীলতার চর্চা জোরদার করি। এতে মিলবে মহান আল্লাহর ভালোবাসা এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা।
ভয়েস/আআ